নিজস্ব প্রতিবেদক// জিয়াউর রহমান শাহাদাত বরণের প্রায় ১৬ দিন আগে আমার সাথে শেষ দেখা। তখন আমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের ছাত্র এবং রামগড় (রাজনৈতিক) জেলা ছাত্রদলের সভাপতি।
তৎকালীন রামগড় মহকুমা বর্তমান খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাংগা উপজেলার তবলছড়ি টি.কে হাই স্কুলের মাঠে রাষ্ট্রনায়ক জিয়ার এক জনসভায় আমি উপস্থাপনার দায়িত্ব পাই।
সেখানে মহান নেতার সাথে শেষ দেখা, জনসভার এক পর্যায়ে প্রিয় নেতা, আমার আইডল জিয়া আমার কাঁদে হাত দিয়ে একটি ঝাঁকুনি দিয়েছিলো।
যদিও এর আগে রামগড়, গুইমারা, মানিকছড়ি ও মাটিরাংগাতে এরকম ৫টি জনসভায় আমার উপস্থাপনার সৌভাগ্য হয়েছিল এবং ঢাকায় ছাত্রদের নিয়ে করা প্রেসিডেন্ট জিয়ার দুটি ক্লাসে আমার অংশগ্রহণ করার সুযোগ হয়েছিলো।
তবলছড়িতে তিনি রাত্রিযাপন করার কথা ছিলো এবং সে লক্ষে একটি পাহাড়ি মাচাংঘরও তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু আকাশের আবহাওয়া খারাপ ছিলো, পাশাপাশি আকাশে একাধিক হেলিকপ্টারও ঘুরাঘুরি করছিলো। এক পর্যায়ে গোয়েন্দাদের কানাকানি ও নড়াচড়া লক্ষ করি এবং প্রেসিডেন্ট জনসভা শেষ করে চলে যান।
অবশ্য পরে জানতে পারি খুনি মঞ্জুরের হেলিকপ্টারই ঘুরাঘুরি করছিলো এবং ওই রাতে তবলছড়িতেই জিয়াকে জেনারেল মঞ্জুর হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। যার ফলে গোয়েন্দাদের অনুরোধসূচক তথ্যের কারণে জিয়া সেদিন পাহাড়ে রাত্রিবাস করেননি! ফলে মঞ্জুর সেদিন জিয়াকে আঘাত করতে পারেনি। অবশ্য কাপুরুষ মঞ্জুর ও তার দোসররা সেদিন থেকে ১৬ দিন পর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে তাদের মনোবাসনা পূরণ করেছিল ৩০ মে গভীর রাতে।
পরদিন ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী ভবনের সামনে অথাৎ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার লনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সম্মেলন ছিলো, সকাল ১০ টায়।
প্রেসিডেন্ট জিয়া সকাল ৯ টার ফ্লাইটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে আমাদের কাউন্সিল উদ্বোধন করার সিদ্ধান্ত ছিলো, তখন আমরা ছাত্রদলের তৎকালীন সেক্রেটারি আবুল কাশেম চৌধুরীর নেতৃত্বে এই মহানায়কের অপেক্ষায় প্যান্ডেলে অপেক্ষারত।
কখন মহানায়ক জিয়া আসবেন আর সম্মেলন শুরু হবে কিন্তু রাস্ট্রনায়ক আর আসলেন না। আসলো একটি রেডিও বার্তা। যা চরম অসন্তোষের মধ্যে দিয়ে আমরা সেদিন সকালেই প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজের কাজ থেকে জানতে পারলাম, জিয়াকে হত্যা করেছে মন্জুর ও তার সহচররা।
এ খবরে শোকে কাতর সেখানে উপস্থিত ছাত্রদলের ছাত্র-ছাত্রীরা তাৎক্ষণিক রমনার সে সুগন্ধা থেকে শোককে শক্তিতে পরিনত করে ঢাকায় প্রথম অশ্রুঝরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে। যে মিছিলে আমিও অংশগ্রহণ করতে পেরে আজও আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। অবশেষে ঢাকায় অপেক্ষা এবং প্রায় দুদিন পর তৎকালীন সংসদ ভবন আজকের প্রধানমন্ত্রীর অফিসের সামনে প্রিয় নেতার লাশ দেখি হাজার মানুষের সাথে।
যেখানে লাশের পাশে প্রথমবারের মত কান্নারত ম্যাডাম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও কোকো রহমানকে দেখতে পাই। এবং পরদিন বন্ধু আনোয়ারের ফার্মগেটের বাসা থেকে মানিকমিয়াতে গিয়ে কোটি মানুষের সাথে আমার নেতা মহানায়কের জানাযায় সামিল হয়ে চিরনিদ্রায় শায়িত করে, নিজের চোখের জল নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি।
কিন্তু আজ হে বাংলার আইডল জিয়াউর রহমান। স্বাধীনতার এই দিনে অনেক মনে পড়ে, হে প্রিয় লিডার বড্ড ভালোবাসি তোমায়, আজ দেশের এই ক্লান্তিকালে তোমাকে খুবই প্রয়োজন ছিল কিন্তু তুমি নেই আমাদের মাঝে, তোমাকে হায়নারা নিয়ে গেছে আমাদের কাছ থেকে।
#কপি রাইট